রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৫৪ অপরাহ্ন
আলোর সংবাদ ডেক্স: চর্ম ও যৌন বিশেষজ্ঞ হিসেবে গত তিন বছর ধরে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। রোগীও আসেন তার চেম্বারে। কিন্তু নিজের না আছে বিশেষ কোনো ডাক্তারি বিদ্যা কিংবা সনদ। না আছে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো অনুমোদন। তবুও তিন বছর ধরে ‘বিশেষজ্ঞ ডাক্তার’ হিসেবে পরিচিত ডেমরা থানাধীন এসএইচএস হেলথ কেয়ার হসপিটাল অ্যান্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিকের চেয়ারম্যান শওকত হোসেন সুমন।
তবে শেষ রক্ষা হয়নি। পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) হাতে ধরা পড়েছে তার কুকীর্তি।
রোববার (১২ জুলাই) সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করে র্যাব-৩। সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তিনজনের জেল-জরিমানা প্রদান করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু। একইসাথে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত হাসপাতালটি সিলগালা করেছেন।
র্যাব জানিয়েছে, গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় র্যাব-৩ সারুলিয়ার এস এইচ এম হেলথ কেয়ার হসপিটাল অ্যান্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালায়। রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত অভিযান চলে। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু। হাসপাতালটির মালিক শওকত হোসেন সুমন। চিকিৎসক না হয়েও তিন বছর ধরে হাসপাতালে রোগী দেখছেন তিনি। এ ছাড়া দেড় বছর আগেই হাসপাতালের রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। বাড়তি রোজগারের আশায় হাসপাতালের ল্যাবে রোগীদের অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা করানো হতো। নিজেই পরীক্ষার রিপোর্ট বিভিন্ন চিকিৎসকের নামে স্বাক্ষর করতেন। হাসপাতালেই তার ফার্মেসিতে মেয়াদ উত্তীর্ণ
ওষুধ ও বিক্রি নিষিদ্ধ সরকারি ওষুধ বিক্রি করা হয়। এসব ওষুধ জব্দ করা হয়েছে। ভুয়া চিকিৎসক সুমন, তার টেকনোলজিস্ট অসীম মণ্ডল ও কাকন মিয়াকে আটক করা হয়। সুমনকে দুই বছরের কারাদণ্ড, দুই লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাস, অসীম মণ্ডলকে এক লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাস এবং ফার্মেসি পরিচালক কাকন মিয়াকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভুয়া চিকিৎসক সুমন ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এন.পি.পি) ঢাকা মহানগরের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক। চিকিৎসক সেজে তিনি বিভিন্ন টেলিভিশনে টকশো’ করতেন। তার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর দুমকি থানা এলাকায়। তার আরও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে শাহানাজ হেলথ কেয়ার ফাউন্ডেশন, নিউ হেলথ কেয়ার অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নিউ হেলথ কেয়ার সেন্টার ও এস এইচ এস ফার্মাসিউটিক্যাল লি.।
র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু আরো বলেন, ‘করোনার এই ভয়াবহতার মধ্যেও মানুষ ঠকানো বন্ধ হচ্ছে না, বরং নতুন নতুন কায়দায় এসব হচ্ছে। গ্রেপ্তার করা ভুয়া ডাক্তার শওকত হোসেন সুমন গত ৩ বছর ধরে হাসপাতালটি প্রতারণামূলকভাবে পরিচালনা করে আসছে। এদিকে গত দেড় বছর আগেই হাসপাতালালের রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ শেষ হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ডাক্তার হিসেবে তিনি কোনো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। সুমনের আরও চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পর্যায়ক্রমে ওসব প্রতিষ্ঠানেও অভিযান পরিচালনা করা হবে।’